ইস্কুলের ডায়েরি #১

“বসে বসে কি ভাবছিস – তারা তারি করে খাওয়া শেষ কর, তোর ইস্কুলের বাস এসে পরবে”। মা আমার আলুমিনিউমের টিফিন বাক্সে চার টুকরো পাউরুটি, কলা একটা ডিম সেদ্য আর ফেলু ময়রার দকানের ২টাকা দামের সন্দেশ ভরতে ভরতে বলল।

আমার ইস্কুকের বাস আসবে সারে সাতটায়, ঠিক পাচ মিনিট বাকি। গলা ভাত আর ডালের শেষ গরাসটা মুখে গুজে, টিফিন বাক্স ইস্কুল ব্যাগে ভরে দউর লাগালাম কলোনির গেটের দিকে। কলোনির গেটের গায়ে দারয়ানের ঘুমটি, ইস্কুলের বাস সেইখানে আসবে। গেটে পউছে দেখি বাবু, গুড্ডু, সমির, তিলক সব আমার আগেই পউছে গেছে। সবাই গুড্ডুকে ঘিরে ওর জুতর দিকে দেখছে। গুড্ডুর এক পায়ে জুতো খলা। খোলা জুতর ভেতরে একটা কম্পাস বসানো, তার কাঁটা সব সময় উত্তর দিক নির্ণয় করছে। বাবু পা দিয়ে ঠেলে জুতটা এদিক অদিক ঘোরাচ্ছে, কম্পাস ঠিক কাজ করে কি না তা জাচাই করতে। দাদার নুতন জুতো এতটা সম্মান পাচ্ছে দেখে মন্টির হয়ত একটু বাহবা পাবার ইচ্ছা হয়ছিল – গুড্ডুর ভাই মন্টি, চার বছরের ছোট – মানে আমার থেকেও দুই বছরের কম – তাই ওকে কেউ পাত্তা দেয় না।

বাটার নুতন জুতো
বাটার নুতন জুতো

“আমার ও সেম জুতো” বলে গরবের সাথে নিজের বা ঠ্যাঙ বারিয়ে দারাল – নেতাজির মতন।

“চুপ কর – তোকে কে জিগ্যেস করেছে গবেট” পার্থ এক ধমক দিয়ে জরসে ওর নতুন জুতার উপর নিজের ৮ নম্বর বুট দিয়ে নিউ স্ট্যাম্প বসিয়ে দিল।

মন্টিটা চিরকাল ভ্যাতকাদুনে – সঙ্গে সঙ্গে কান্না জুরে দিল জোরসে আর তার সাথে দাদার কাছে নালিশ। ভাইয়ের উপর এই অহেতুক আক্রমনের প্রতিবাদ করা করতব্য, গুড্ডুর ভাত্রি প্রেমে নারা পরল – ও পার্থর শার্ট টেনে ধরল।

“তুই আমার ভাইকে মারলি কেন” পার্থকে প্রশ্ন। গুড্ডুর শাস্থ ভাল, রোজ বেয়াম করে, পার্থ তুলনায় রগা পাংলা।

“কই মারলাম কোথায়” ?

“আমি দেখলাম তুই ওর পা ইচ্ছে করে মারিয় দিলি”।

“পা মারানো আর মারা এক হল নাকি? আমি শুধু দেকছিলাম কম্পাস জুতটা শক্ত পোক্ত কিনা। খাটি মাল – বাটার জুতো – খাটি না হয় যায়”।

ব্যাপারটা কোন দিকে গরাত বলা কঠিন, হয়ত শকাল শকাল মারামারি লাগে – ঠিক এই সময় আমাদের স্কুল বাস এসে হরন বাজাল। নিল রঙের ম্যাটাডর কম্পানির বাস। ড্রাইভারের পাসে ৩টে সিট আর পিছনে ৩টে সারি। প্রতি সারিতে ৪ জন বস্তে পারে। প্রতি সারিতে একটা সিট ভাজ হয় জায়ে, ভাজ করা সিট টপকে পিছনের সারিত জেতে হয়। সাম্নের সারিতে প্রথম সিট ভাজ হয়,ওটা খালাসীর জায়েগা – আমাদের কনও খালাসি নেই অখানে জনি বসে। আমি বসি মাঝের সারিতে, পারলে জানলার ধারে। বর ছেলেরা পেছনের সারিতে আর কুচপনারা সামনের সিটে। আমাদের বাসের ড্রাইবার পন্ডিতজি – তার বিশাল ভুরি আরে চকচকে টাক। মাথার পিছনে টিকি – তাই তার নাম দিয়েছি পন্দিতজি – আসল নাম কোনদিন জানি নি। তাঁর বারিটা ছিল রিষরা রেল স্টেশনের পাশে। একবার কি কারনে আমাদের বাস সুদ্ধ নিয়ে তাঁর বারি দেখিয়েছিল – কিছু খাওয়ায়ে নি যদিয়ও।

বাস ছুটছে জিটি রোড ধরে – প্রথম হল্ট কন্নগর বাটা (যেখান থেকে গুড্ডু – মন্টির জুতো কেনা হয়েছে) এখান থেকে একটা ছোট ছেলে ওঠে – অজয় – ওর মা উঠিয়ে দেয়। ছেলেটা খুব মুখচোরা, কারুর সঙ্গে কথা বলে না। পার্থ আমাদের থেকে ৪ বছরের বর – অকাল পক্ক – অজয় কে রোজ খেপায়ে।

“কি রে – মা তোকে এখনও বাসে তুলে দিতে আসে – কচি খোকা”। এই ধরনের মিচকে পিছনে লাগা, পার্থ দঃ – চিরকালের মিচকে স্বভাব। অজয় কে হাগু মাস্টার উপাধিটা পার্থই দেয়, সে কথা পরে বলব।

বার মন্দির
বার মন্দির

বাস ছুটতে থাকে, গঙ্গার ধারে বারো মন্দির পেরিয়ে উত্তরপারার দিকে। বারো মন্দির পেরাবার সময় বাস সুদ্ধ সবাই একবার নমস্কার করে নেয়। প্রথমবার আমি বুঝি নি কেন সবাই হঠাত চোখ বুজে প্রার্থনা করতে শুরু করল। পরে আমাকে কেউ বলে দিল এটা করতে হয় কনও মন্দিরের পাস দিয়ে গেলে।

“ও আচ্ছা ঠিক আছে – জানতাম না”  আমি অল্প লজ্জিত, এটা আমার জানাটা উচিত ছিল কিনা বুঝলাম না। একেবারে প্রথম দিনের কথা তার পর থেকে সবার সাথে তাল মিলিয়ে চোখ বুজে নমও করতাম বারো মন্দির – আর আবার বালি খাল পেরলে। বালি খাল থেকে দূরে দক্ষিণেশ্বর দেখা জেত কিনা। এরকম মন্দির দেখলেই নমস্কার করতে গিয়ে গুড্ডু একবার খোরাক হয়ছিল। বিনা কারনে গুড্ডু চোখ বুজে ভক্তি ভরে নমস্কার ঠুকল। বাস তখন বেলুর পেরিয়ে লিলুয়ার দিকে এগচ্ছে। আমরা সবাই মুখ চাওয়া চায়ি করলাম – ব্যাপার কি? বালি খাল ত কবে ফেলে এসেছি। পার্থ খোঁচা দিয়ে জিগ্যেশ করল “কাকে নমস্কার করছিস”, আর ঠিক এই সময় একটা গুয়ের গারি তাঁর নোমরা গন্ধ ছারতে ছারতে আমাদের বাসের পাশ দিয়ে উল্ট দিকে গেল। গুড্ডু গম্ভীর ভাবে চোখ খুলে বলল “ভগবান কে ডাকছি”। বলেই তারা তারি ওকে নাক চেপে ধরতে হল। গুয়ের গারির বিস্রি গন্ধে আমাদের বাসে টেকা দায়ে। আমারা সকলে এক হাতে নাক চেপে অন্য হাত দিয়ে ওকে বেশ কয়েকটা কিল চর বসালাম। “তুই একটা আস্ত পাঁঠা – গুয়ের গারিকে নমস্কার করছিস”! গুড্ডু বেচারা জত বলে ও একটা মন্দির দেখেছিল কেউ ওর কথা শুনতে চাইল না। পার্থ ঠোট বাকিয়ে আস্তে বলল “সাধে কি বলে মেড়োর বাচ্চা”। ভাগ্যি ভাল গুড্ডু শুনতে পায় নি – কুরুক্ষেত্র লেগে যেত।

উত্তরপারায় একবার দারাতে হয় ডি-অল্ডি কম্পানির সামেন। সেখান থেকে জনি ওঠে। ওই শেষ সওয়ারঅ, তাই ওর ভাগ্যে খালাসীর সিট বরাদ্দ। এরপর আর থামা নেই, সোজা বালি খালের উপর দিয়ে, শ্রী কৃষ্ণ সিনেমা হলের গা ঘেশে,  বেলুর পেরিয়ে একেবারে লিলুয়া। তখন লিলুয়ার মতন নমরা জাগা আরে দুটো ছিল না। কি আরে করা আমাদের স্কুল ছিল লিলুয়াতে, তাই এতটা পথ ঠেলে রোজ এই লিলুয়ার ডন বস্ক ইস্কুলেই পরতে আসতাম আমরা সবাই।আমার নাম সূর্য ডাক নাম গুগুল। ক্লাস ৩ তে পরি। আমার সাথে জারা বাসে আসে তাদের মধ্যে সমির আর আশ্বিন আমার ক্লাসে। তপু, তিলক, বিবেক এক বছরের বড়, আর বাবু, রাজনিশ, পার্থ এরা ৩ বছরের বড়। আজ ইস্কুলের প্রথম দিন। বড় দিনের লম্বা ছুটির পর ইস্কুল খুলেছে।

বাস থেকে নামতেই সঞ্জয় দত্ত আমাকে ধরল। সঞ্জয় আমার ক্লাসের বন্ধ্য। অ থাকে সাল্কিয়া তে। মহা ফক্কর – পরা শুনা মটেই করে না।

“কি করলি, সারা ছুটি খেয়ে খেয়ে আর একটু মটা হতে পারলি না”

“না অনেক খেয়েছি – মোটা হয়েছে সমির – দ্যাখ ওর প্যান্ট আর ফিট হয় না”

সঞ্জয় হাসলও – সমির কে দূর থেকে হাক দিল – “এই ডিঙ্গও – এত মোটা হলি কি খেয়ে”

সমির আমাদের দিকে তেরে এল। ডিঙ্গও বলে ডাকলে ও খেপে ওঠে। ভুগল ক্লাসে অস্ট্রেলিয়া নিয়ে পরতে হয়েছিল গত বছর। ওখানকার জংলি কুকুর ডিঙ্গও – সেই খান থেকে সমিরকে কেন ডিঙ্গও নাম দেওয়া হল তার ভাল ব্যাখা আমি দিতে পারব না। মোট কথা ওকে ডিঙ্গো ডাকলেই সমির খেপে ঊঠত। আমরা দুজনেই প্রানের দায়ে দউর লাগালাম – ডিঙ্গো আমাদের ধরতে পারল না।

ইস্কুলের মাজখানে – হেডমাস্টারের ঘরের পাশে একটা বড় বোর্ড। দিনের দরকারি খবর ওইখানে লেখা থাকে। সামনে দারিয়ে দেখি অনেক ছেলের ভির। সবাই উত্তজিত। বোর্ডে বড় বড় অক্ষরে লেখা-

Welcome Back To School

Todays Programme will include Assembly at 8:40pm followed by classes till 12:00 noon.

12:00 noon – 12:40pm will be lunch

Movie Screening in Main Auditorium

1:00pm – 4:00pm : Movie screening for all students SCARAMOUCHE

A swashbuckling adventure movies for all ages. Students who do not want to watch the movie may be allowed to go home after lunch recess. Normal classes will be held from tomorrow.

scaramouche poster
scaramouche poster

আমাদের ভেতর হইচই – মহা ফুরতি। তাঁর মানে আজ আর পরা নেই। কনও মতে টিফিন অব্দি টেনে দিতে পারলেই হল। তারপর জমিয়ে সিনেমা দেখা যাবে। অদ্ভুত নাম স্কারামুশ। উল্ট দিকের পিন বোর্ডে সিনেমার পস্টার আটা হয়েছে। পস্টারটা খুটিয়ে পরা হল – পরার বই কনও দিন অত মন দিয়ে পরি নি।

” Swordfighting আছে” গুরু বলল।

“হিরোইন কে দেখেছিস – কি দেখতে মাইরি” এটা পিনাকি কান চুল্কাতে চুল্কাতে।

“হেবি জমবে – মারামারি ফাটাফাটি” সঞ্জয় চশ্মার কাচ মুছতে মুছতে।

প্রথম দিনটা ভালই কাটবে – আমি নিজের মনে মনেই বললাম।

 

 

 

 

 

14 comments

  1. Ore guru, fata fati chalie jao, ki nosylagia toyri korechis mair, tor jawab nei, aaro lekh, aaro lekh, kolom thamas na

    Like

  2. An outstanding share! I have just forwarded this onto a friend who had been
    doing a little research on this. And he in fact
    bought me lunch simply because I stumbled upon it for him…
    lol. So let me reword this…. Thank YOU for the meal!! But yeah, thanks for spending time
    to talk about this issue here on your web site.

    Like

  3. Great read…fantastic….we all enjoyed it thoroughly….guer gari ta memory theke prae obsolete hoen giyechilo…..girls were always more civilized… we would refer to it as bombay mail….LOL

    Like

  4. excellent….school’er din gulo mone pore jachee !! apekshai roilam….abar sei rongin dingulo mone korea debe!!

    Like

  5. খুব ভালো হচ্ছে লেখা টা | Every bit down the memory lane mapped out in ur mind-terrific recollection !

    Like

    • Taste for blood 4:
      ‘Very smart lines.Equilibirium struck n justice done. Crime certainly does not pay. The antagonist is a weak character an emotional wreck. He could not hv come off clean under the wt of his crime n escape like a hardcore. Loses the battle still worse was the defeat before the girl with whom his one sided silent infatuation rested on a cowardly flimsy platform. Intimacy of the jubilant pair was disastrous to his manhood practically was eaten away inwards.The impulsive homicide was perhaps the final straw culminating in a long long escape…excellent read’

      Like

Leave a comment