তৃতীয় হাতে হরতনের বিবি ঝারল মন্টুদা – ভুল চাল । তুরুপের তাসের পুরো সেট বিপক্ষের হাতে । ইস্কাবনের পাতা জোরে ঠুকে পিট ধরল ব্রজ । এ হাতটা ওরাই জিতবে । ভুল ডেকেছে মন্টুদা – ছোটকা থ্রি হারটসের ডাকের উপর পাস না দিয়ে ওটাকে চরানো উচিত ছিল ।
“কি কল করলে – মন্টুদা – এই নাও এবার এ দুটো হজম কর”, বলে পর পর তুরুপের টেক্কা বিবি মেরে বাজি ধরে নিল ব্রজ ।
“ ছোটকা, নোট এনেছিস তো – হারলে পাiইটের পয়সা খসাতে হবে। তোর পারটনার আজ ছড়াচ্ছে। ফোকটে মাল আর বেদুইন থেকে মাংশটা হাক দি”।
ওভারপাসের তলায় কঙ্ক্রিটের স্ল্যাবটার উপর একটু নরে বসল ছোটকা, কিছু বলল না। বিরক্ত লাগছে। আজকে না আসলেই হত। শালা সকাল থেকে দিনটাই খারাপ জাচ্ছে । রিন্টুর ইস্কুলের বইয়ের পয়সা তুলেতে পারে নি -এটিম লাইনে ১ ঘন্টা দাঁড়ানোর পর নোট ফুরিয়ে গেছিল। খালি হাতে ফিরে আস্তে হল। পকেটে দুটো ২০ টাকার নোট পরে আছে। শালা – মদি সরকার জিন্দাবাদ।
রাস্তায়ে লোক এখনও ভালই আছে। সামনে বড় দিনের ছুটি, সব মা বোনেরা কেনাকাটি সারছে। ফূট ভরতি জনতার স্রোত। রাস্তায় গারি বাসের জট। লাইটে দারাচ্ছে, মোর থেকে প্যাসেঞ্জার তুলছে। তাদের পাস কাটিয়ে লোকে এ ফুট থেকে ও ফুট রাস্তা পার করছে। ওদের তাসের ঠেকের জাগাটা খাসা । মাথার উপর অভারপাসের রাস্তা কিন্তু চাকার আওয়াজ তেমন আসে না । রাস্তা থেকে জাগাটা চোখে পরে না। লোক জন ওদের কোনাটায় আসে না। তাই দুটো মিনির ফাক দিয়ে একটা হাফ প্যান্ট আর গেঞ্জি পরা ছেলে যখন ওদের তাসের ঠেকের উপর হুম্রি খেল – সবাই চোখ তুলল ।
“ওরা বাবলুদার বউকে মারছে”
“কোন বাব্লু” ?
“ক্যাম্পের বাব্লু” ?
হাপাতে হাপাতে – ছেলেটা শুধু মাথা নারল।
“কে মারছে” ছটকা ছেলেটাকে চেনে। বেদুইনে বাসন ধোয়ে। ভয় পেয়ে গেছে, নিশ্বাস জোরে ফেলছে, এখনো হাপাচ্চছে।
“জানি না – দুটো লোক, বাইকে করে – দোকানের সামনে” ।
বাব্লু কে ছোটকা চেনে। ক্যাম্পের একটা ঘরে বউ আর মা নিয়ে থাকে। পূর্ণদাস রোডের দিকটায়। নতুন বিয়ে করেছে, এক বছর ও হয় নি। বিয়েতে গিয়েছিল ছোটকা, প্রেসার কুকার দিয়েছিল।
“চল তো – দেখি” ।
তাস ফেলে উঠে পরল ছোটকা। একবার ঘুরে বাকি তিনজনের দিকে তাকাল। ওরা কেউ নরে নি। ফোকটের ঝামেলায় কেউ জরাতে চায় না। দুনিয়া পালটে গেছে, আগে এরকমটা হত না। এখন সবাই হিসাবে চলে। এরা কেউ উঠবে না। গারি কাটিয়ে রাস্তা পার হল, সাথে ছোট ছেলেটা। বেদুইন দকান্টা মেন রোড থেকে একটু ঢোকান। হপ্তায় এক দু দিন তাসের পরে ওরা দকানের পিছনে বসে রুটি মাংশ খায়ে। সাথে গরমেন্ট দকান থেকে কেনা বাংলা পাইট। আজ কাল মাল খেতে ভাল লাগে না – মুখে তেতও লাগে। গ্যারেজ মালিক আগে নিয়মিত ওভারটাইম করতে বলত। হপ্তায় কয়েক হাজার উপরি রোজগার হয় জেত। গত দু মাস ধিরেন দার ছেলে ব্যাবসা দেখছে। প্রথম দিন থেকে ছোটকার সাথে ঠোকা ঠুকি লেগেছে। ওভারটাইম বন্ধ হয় গেছে। হপ্তায় ৫ দিনের বেশি কাজ দিছে না। জিগ্যস করলে বলে বাজার মন্দা, কাজ নাই। এদিকে খোকন, যে ওর সাথে মিস্তিরি কাজ করে – সে রোজ কাজ পাচ্ছে। ভাল লাগছে না ছটকার – কাজ ছেরে দেবে ভেবেছে অনেকবার। কিন্তু ছারে নি। বারিতে বউ মেয়ে ওর আনা ওই কটা টাকার উপর ভরসা করে আছে। আজ সকাল বেলা কল্পনার কাছে কথা শুনতে হয়ছে। রিন্টুর ইস্কুলের বই কেনবার পয়সা কম পরেছে। বউয়ের কথা শুনতে ভাল লাগেনি ছোটকার। মাথাটা কিরম গরম লাগতে লেগেছে। বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসতে হয়েছে না খেয়ে। মুখটা তেতো লাগছে।
বেদুইনের সামনে বাতির তলায় দুটো লোক দারিয়ে আছে। রাখাল দা দোকান চালায়। কাউন্টারের পিছনে কাঠ হয় দারিয়ে আছে। দকানের সামনে কাঠের বেঞ্চিতে একটা বউ বসে ফুপিয়ে কাঁদছে। ব্যাগ থেকে রুমাল বার করে কনুই এর ছরা জাগটা ধরে আছে। ডান হাতের কব্জির কাছটাও ছোরে গেছে। বউটাকে চিনতে পারল ছোটকা – বাব্লুর বউ।
“কি করে হল”?
“ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছে আমাকে। রাস্তায় ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছে। বড্ড ব্যাথা করছে। আমাকে বাড়ি নিয়ে চল ছোটকা দা।”
“কে মারল ধাক্কা ?”
“ওই লোকটা। বাইকের পাসে লম্বা করে। ও মেরেছে।”
“কেন? মারল কেন। তুই কিছু করেছিলি?”
“দোকানের সামনে আমাকে পেছন থেকে হাত লাগিয়েছিল। আমি গালাগাল করেছিলাম। হারামি বলেছি।”
ছোটকা উঠে দারাল। “তুই বস আমি দেখছি।” মাথাটা অল্প দপদপ করছে। লোক দুটো বাইকের পাসে দারিয়ে রোল খাচ্ছে। সামনে দারাতে লোকটাকে চিনতে পারল। লেক থানার সাব ইন্সপেক্টর। একবার তাসের আড্ডা থেকে ৪ জোনকে তুলে নিয়ে গেছিল। ছোটকা ছিল। কিছু করতে পারে নি। ওরা পয়সা রেখে খেলে না। সংবিধানে তাস খেলার বাধা নেই – লোকটা তখন নতুন থানা জইন করেছিল। খবরদারি করতে পারে তাই করেছিল। ও ছোটকা কে চিনতে পারে নি।
“আপনি মেয়েটার গায়ে হাত তুলেছেন?”
লোকটা ওর দিকে ফিরল। চোখ লাল, মুখে মদের গন্ধ ছোটকার নাকে লাগল।
“কে বে তুই। ওর গারজেন নাকি শালা। তুই ওর কে হোশ?”
“আপনাকে মাপ চাইতে হবে।”
“কি বললি শালা, মাপ চাইতে হবে – জানিস কার সাথে কথা বলছিস।”
লোকটা বাইক ছেরে উঠে এল। ছোটকার সামনে এসে দারাল। দৈত্যের মত লম্বা, ছোটকার মাথা ওর বুকের কাছে। কসরত করা শক্তিশালী চেহারা। গত মাসে কালিবারির পেছনে চোলাই ঠেক রেড করে পারার ৪টে ছেলেকে উঠিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। তারপর সারা রাত লকআপে রবারের পাইপ দিয়ে ঠেঙ্গিয়ে ছিল, পায়ের পাতায়। কনফেসান পাবার আশায়, যাতে ওদের গলায় আরো দু একটা কেস লোটকে দেওয়া যায়।
“জানি আপনি লেক থানার দারোগা। তা আপণী দারোগাই হোণ বা পুলিস কোমীষাণাড়, মাপ আপণাকে চাইতে হবে।”
“শালা সুয়ারের বাচ্চা – যত বড় মুখ নয়… “, লোকটা কথা শেষ করল না। ছোটকার গালে একটা সজোরে থাপ্পর। আচমকা আক্রমনের জন্য সে প্রস্তুত ছিল না। চরের ভারে মাথা গুরে গেল ছোটকার। এক মুহূর্তের চোখের ভেতর কালি পুজার তুব্রি ফেটে উঠল। তারপর আবার উঠে দারাল, মাথা দুবার ঝাকিয়ে নিজেকে সাম্লাবার একটা চেষ্টা। লোকটা ওর সামনে দারিয়ে দাত খিচিয়ে কিছু বলছে। ছোটকা ঠিক শুনতে পারছে না। ডান কান্টা থাপ্পরের চটে ভনভন করছে। তার উপর মাথায় রক্ত চরে গেছে অগ্নি শিখার মত। লোকটার উপর ঝাপিয়ে পরে মুখ ফাটিয়ে দিতে ইচ্ছে করছিল ছোটকার, ইচ্ছে করছিল শালার মাথায় থান ইট দিয়ে চার্জ করতে, হাতে ছুরি থাকলে বসিয়ে দিত লোকটার ছাতিতে। লোকটা হাসছে, শালার হাসি নয়ে রক্ত পরত…… কিন্তু না এসব কিছুই করল না। পুলিসের দারোগা, ওর কাছে চেম্বার থাকা অস্বাভাবিক না। সামনা সামনি হামলা করা মূর্খতা। ছোটকা ফূটের ধারে একবার থুতু ফেলে উঠে দারাল।
লোকটা এখন বিজয় গর্বে মত্ত।
“এক থাপ্পরে পরে গেছিস – আর চাস তো বল – এরপর আর উঠে পারবি না। আর চাস শালা।”
ছোটকা গালের উপর হাত রেখে মাথা নারল। মাথাটা কেমন দপদপ করছে। সব কিছু লালচে দেখাচ্ছে।
“চল ফোট। ফের যদি দেখি লক আপ এ নিয়ে ঠ্যাঙ ভেঙ্গে দেব হারামি। লাম্পস্টের তলায় বসে ভিক্কে করবি।”
ছোটকা রাস্তায় নেমে হাটতে শুরু করল। বড় রাস্তার উল্ট মুখে। বাব্লুর বৌটা আর দারায় নি – সে উধাও। রাখাল দা দোকানের ভেতরে ঢুকে গেছে। পুলিসের সাথে কেউ পাঙ্গা নেয় না। রাত প্রায় ৯টা, লোকের ভির কমতে লেগেছে। ছোটকা ফুসছে, মাথায় খালি একটাই কথা। রাস্তায়ে সবার সামনে গালে চর মারল লোকটা। হোক না পুলিশ, এর প্রতিশধ নিতে হবে। কালকে নয় এখুনি বদলা নিতে হবে। এরিয়ার ছেলেরা সব ওকে চেনে, মানে। ও কোনে দলে থাকে না তবু ওকে সবাই ইজ্জত করে। ইজ্জত করত… আর আজকে এই মাদারচোদ পুলিস ছোটকার ইজ্জত পুরো মাটিতে মিশিয়ে দিল। তার মাথার ভেতর দাবানল দাউ দাউ করে জলছে। ছোটকা এদিক দেখছে ওদিক দেখছে। একটা অস্ত্র চাই আঘাত করবার জন্য। কি পাওয়া যায় হাতের কাছে। রাস্তার ধারে বাড়ি তইরির বালি আর ইট পরে আছে স্তুপ করে। শালার চোখে বালি ছুরে দিয়ে ইট মেরে মাথা ফাটিয়ে দিলে কি হয়। ভাল হয়। আর কি আছে। রাখাল দার উনুনে কেটলি তে জল ফুটছে। টগবগ টগবগ। লোক দুটো এখনও দারিয়ে গল্প করছে, আর বেশী সময় নেই। ওরা এবার হিসাব চুকিয়ে বাইকে ফেটে যাবে। যা করবার এখুনি করতে হবে। ছটকা গলির মোর অব্দি গিয়ে আবার ঘুরে ফিরে এল দকানের পাশে। ওরা এখনও দেখে নি, রাখাল দা দেখেছে। ভয় ভয় চোখে উনুনের পাশে দারিয়ে। ছোটকা ইশারা করল কেটলির ঢাকা খুলে রাখতে। দোকানের সামনে দিকটা বাঁশ বাধা টালির ছাদ। নিচে কাঠের বেঞ্চি পাতা। ছাত নিচু হাত তুললে বাঁশ ধরা যায়। বাঁশের গায়ে লাগানো একটা টিউব্লাইটে জাগাটা আলো হচ্ছে। ছোটকা আর চোখে আলোটা দেখে নিল। হাত উঠিয়ে টান দিতেই সেটা ঝুলে পরল। কাজ চলবে, এতেই কাজ চলবে।
ছোটকা এগিয়ে গেল লোক দুটোর দিকে।
“আই হারামি, খোঁচও কি করবি তুই। সাহস আছে তো আয়েনা একবার।”
লোক দুটো ওর দিকে তাকিয়েছে।
ছোটকার চাল ওরা ধরতে পারল না। একটা রোগা প্যাংলা ছেলে যাকে এক চরে খতম করা যায়ে। এটাই দেখল পুলিস্টা। গর্জন করে ওর দিকে তেরে এল। ছোটকা পেছচ্চে। পুলিস্টা প্রায় ঘারের উপর। মাথার উপরে আলগা টিউব। ছোটকা হাত তুলে বাটাম সুদ্ধ হাচকা মারল। বাটাম টিউব সমেত খুলে এল তার হাতে। পুলিস্টার পাশবিক বিক্রিত মুখ তার মুখের সামনে। ছোটকা একটা হিংস্র চিৎকার করে টিউবটা ঘুরিয়ে মারল লোকটার মুখে। টিউবের গরম গ্যাস্টা ফেটে আলো টা চউচির হয়ে গেল। ছোটকার হাত ময় রক্ত আরে লোকটার মুখময় কাঁচ। লোকটা মুখ ধরে পরে গেল ফুটপাথে। ছোটকার মাথায় আগুন্টা দাউ দাউ করে জ্বলে উঠল। সারা পৃথিবী লাল দেখায় কেন। লোকটার উপর দারিয়ে ভাঙা টিউব দিয়ে মারত্মক আক্রমন করল ছোটকা। সে যেন পাগল হয়ে গেছে। লোকটা আর নরছে না, ছোটকার তবু তাকে মেরে যাচ্ছে। লোকটার মুখ আর চেনা যাচ্ছে না, তবু ছোটকা থামে না।
“শেষ করে দেব – আজ শেষ করে দেব”। কেউ ওকে পেছন থেকে ধরে রেখেছ। শালা চামচাটাকে ভুলে গেছিল। ওটাকেও এখানেই মারব। ছোটকার গায় যেন অশুরের শক্তি। এক ঝটকায়ে পেছনের লোকটার হাত থেকে নিজেকে ছারিয়ে নিল, আর তারপর হাতে ভাঙা টিউব উচিয়ে সেই উন্মাদ চিৎকার।
“থাম ছোটকা থাম , আমি রাখালদা – আমাকে খুন করবি তুই।” রাখাল দা হপাচ্ছে, মাটিতে পরে গেছে ধাক্কা সাম্লাতে গিয়ে। চামচাটা বিপদ বুঝে লিড মেরেছে। ও শালা এদিকমুখো হবে না চট করে। একটু হলে রাখাল দার উপর হামলা করে ফেলত ভুল করে। ভাগ্যি ঝটকা খেয়ে রাখাল দা পরে গেছে। যদি আকরে থাকত ছোটকার উপর, তাহলে হয়ত ছোটকা নিজের হাত সময় মত থামাতে পারত না। রাখাল দা ওর পাস কাটিয়ে ফুটে পরে থাকা পুলিস্টার নাকের সামনে হাত রাখল। “এ তো মরে গেছে রে ছোটকা – দেখ বাল্বের বাড়িতে শাস নালি কেটে ফালা ফালা হয়ে গেছে। ইসস কত রক্ত।” রাখাল দা থেমে গেল। ছোটকার মাথার আগুন আর দাবানলের মত জলছে না। আগুনের বদলে তার বুকের ভিতর যেন জমা বরফ। লাম্পস্টের তলায় রক্তে ভেসে জাওয়া ফুটপাত, আরে তার মাঝে পুলিসের ম্রিতদেহ। নিজের ঘোর সঙ্কট বুজতে দেরি হল না তার। ভরা বাজারে খুন করেছ সে, তাও আবার পুলিস কে কাতিল। ধরা পরলে আদালত অব্দি গরাবে না, লকাপেই খতম করে দেবে ওকে। পালাতে হবে – তাকে পালাতেই হবে। মুহূর্তে কল্পনা আর রিন্টুর মুখ ভেসে উঠল তার চোখের সামনে। ওসব চিন্তা করে লাভ নেই। নিজেকে না বাচাতে পারলে অন্যকে কি বাচাবে সে।
রাখাল দা তার হাতে কি একটা গুজে দিচ্ছে। ছোটকা তাকাল – বেশ কয়েকটা ১০০টাকার নোট।
“এ টাকাটা রাখ। কাজে লাগবে। তোকে পালাতে হবে ছোটকা, আজ রাতেই। আমি ওদের কিচ্ছু বলব না। তুই পালা।”
হাটতে শুরু করল – অন্ধকার রাস্তা – বুকের ভিতরে যেন কালো অন্ধকার জমাট বেধে আছে। ও না থাকলে ওর সংসার চলবে কি করে। কে দেবে ঘর চালাবার পয়সা। আর পালাবেই বা কোথায়। হাজার চিন্তা মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে ছোটকার। বাড়ির ভেতর আলো জ্বলছে। মা রাতের রান্না চরিয়েছে। রিন্টু ইস্কুলের পরা করছে আর কল্পনা তার পাসে বসে ছোটকার জামার বোতাম লাগাচ্ছে। ছোটকার এটাই সব, এর জন্য লরা আর এর জন্য বাচা। এবার এসব ছেরে তাকে পালাতে হবে।
“কি হল, দোরগোড়ায় দারিয়ে রইলি কেন – ভেতরে আয়ে। তোর পছন্দের আলু পস্ত বানিয়েছে বউমা। আয়ে খাবি আয়।”
আর এক মুহূর্ত দিধা করলে ও আর মায়া কাটাতে পারবে না। নিজেকে শক্ত করল ছোটকা। “মা, আমাকে কলকাতা ছেরে জেতে হবে। আজি। প্রশ্ন কর না, উত্তর দিতে পারব না। যখন পারব তখন তোমাদের খবর পাঠাব। তোমাদের আমাকে ছাড়া বাচতে হবে।” ছোটকা থেমে গেল, ওর গলা দিয়ে আর কথা বেরোচ্ছে না। যাদের সবচেয়ে ভালবাসে তাদেরকেই আঘাত করছে আজকে। মুহূর্তের মধ্যে ওদের দুনিয়া পালটে যাচ্ছে। ওরা অসাহায়, নির্বাক। রিন্টু প্রথমে ঘোর কাটাল “তুমি আমাদের ছেরে চলে যাবে – বাবা – আর ফিরবে না?” সবে মাত্র ৭ বছর, কিন্তু তার চোখে এত ব্যাথা জমল কি করে। রিন্টুর দুই চোখ জলে ভরে গেছে। ছোটকা আর নিজেকে কাবু রাখতে পারল না। মেয়েকে জরিয়ে ধরল বুকে। “আমি ফিরে আসব তুই দেখিস, বেশী দিন নয় , তুই বুঝতেই পারবি না।”
ঘরে স্তব্ধ তিনটে প্রানি পাথরের মত দারিয়ে রইলো। ছোটকা আলনা থেকে কয়েকটা জামা, অল্প টাকা, আধার কার্ড এগুলো ব্যাগে ভরে ফে্লল। মা বুঝতে পেরেছে ব্যপার কোন দিকে গরিয়েছে। তার তাক থেকে একটা বিস্কুটের টিন খুলে তার থেকে এক তরা টাকা ছোটকার দিকে বারিয়ে দিল। “তুই কি করেছিস জানতে চাই না – তুই বেচে আমার কাছে ফিরে আয়, এটুকুই শুধু ভিক্কা করি ভগবানের কাছে। এই টাকা আমার জমানো। তুই এটা নে।”
ছোটকা দিধা করল, “না ওটা তুমি রেখে দাও, আমি না থাকলে তোমাদের…”
কথা শেষ করতে দিল না মা। অনেক স্ট্রাগেল করেছে মা, বাবা জাবার পর একাই সংসার চালিয়েছে ছোটকা বড় হওয়া অব্দি। ছোটকার দুই দিদির বিয়ে দিয়েছে তার মা।
“তোকে ছাড়া সংসার বন্ধ হবে না রে খোকা। আমরা ঠিক উপায় বার করব। তুই টাকাটা রাখ। আমি তোর ব্যাগে ভরে দিলুম।”
ব্যাগের মধ্যে টাকার সাথে একটা ছোট বাক্সে অল্প তরকারি (আলু পস্ত) আর কয়েকটা স্যাকা রুটি।
“তুই কোথায় জাবি তাও পুছব না – শুধু এটা জানিস যে আমার মেজদা থাকে মুরগাছা তে। তোকে ছোট বেলায় খুব ভালবাসত। শিয়ালদা থেকে একটা রাতের গারি ছারে ওই লাইনের। লালগলা এক্সপ্রেস মনে হয়। তুই আর দেরি করিস না – বেরিয়ে পর।”
মা তার মাথায় হাত রেখে একবার চোখ বুজে বিরবির করল, তার পরেই ছোটকা বাড়ির বাইরে। দরজা পার হতেই পেছন থেকে কল্পনার আওয়াজ। তার গলার শর মিষ্টি। আজ এই অন্ধকার সময় যেন আর মধুর শোনাল।
“আমার থেকে পারমিসন না নিয়ে চলে যাবে”?
কল্পনা বাড়ির বায়েরে এসে দরজার পাশে দারিয়েছে। তার চোখ থেকে চোখ ফেরাতে পারল না ছোটকা। ব্যাথা, ভালবাসা, দুঃখ, ভয় সব একসাথে কি করে থাকে একটা মেয়ের চোখের ভিতর। এক বার, শেষ বারের মত তাকে বুকে টেনে ধরল। একবার শেশবার লম্বা দম বন্ধ হওয়া চুম্বন।
“এই যে নিলাম তোমার পারমিসন”?
“ফিরে এস আমার কাছে – হারিয়ে জেও না”। কল্পনার চোখের কোন থেকে এক ফটা জল গরিয়ে পরল। সে আর পারল না, মুখ ঢেকে ঘরে ঢুকে গেল।
ছোটকা আর দেরি করল না। চোরের মত চুপ চাপ বেরিয়ে পরল পারা থেকে। ট্রাঙ্গুলার পার্কের পেছন থেকে একটা ট্যাক্সি পেয়ে গেল। ঊঠে বসতে ট্যাক্সি আলার প্রশ্ন – “কোথায় জাবেন”?
কোথায় যাবে – কোথায় পালাবে, এসব তো এখনও ভাবা হয় নি। পকেটে সেলফোন বেজে উঠল। মা মেসেজ করেছে। লালগোলা এক্সপ্রেস ছারে শিয়ালদা স্টেশন ১৪ নম্বের প্লাটফরম থেকে রাত ১১টা ৩০ মিনিটে। নিচে মেজমামার ঠিকানা।
“কোথায় যাবেন তা বলুন” লোকটা একটু বিরক্ত।
“শিয়ালদা স্টেশন যাব”।
ট্যাক্সির ভারা মিটিয়ে, রেল কাউন্টার থেকে একটা মুরগাছার টিকিট কেটে যখন ১৪ নম্বর প্লাটফর্মে পৌঁছল, গারি তখন সবে লেগেছে। ভির কাটিয়ে unreserved কামরায় একটা জানলার সিট পেয়ে বসে পরল ছোটকা। ট্রেন ছারতে এখন ৩০ মিনিট বাকি। পকেটের ফোনটা বেজে ঊঠল। মার ফোন – কল পিকাপ করল ছোটকা – কল্পনার গলা, ভয় পেয়েছে।
“তুমি কোথায় – আমার বড় চিন্তা হচ্ছে”।
“আমি ঠিক আছি – চিন্তা কর না। এখন সব বলা যাবে না, পরে তোমাকে আমি সব বলব।”
“পুলিস পাড়ায়ে এসেছিল । বাব্লু দা আর তার বউকে উঠিয়ে নিয়ে গেছে”।
পুলিস যে এ খুনের কিনারা করতে কোন গাফিলতি করবে না এটা জানা তার। নিজেদের একজন খুন হলে পুলিস ছেরে দেবে না সহজে। তবে এত তারাতারি পাড়ায়ে পউছল কি করে।
“কেন ওদের ওঠাল কিছু শুনলে”?
“হ্যা। বেদুইনের সামনে এক পুলিস খুন হয়েছে। একটা সাক্ষী ছিল। সে বাব্লু দার বৌ কে চিনিয়ে দিয়েছে পুলিসের কাছে”।
ছোটকার বুকের ভেতর বরফের ছুরিটা যেন কেউ মুচরে দিল। ওই চামচাটা পালিয়ে পুলিশের কাছে গেছে। ও কি ছোটকা কে চেনে?
“আমার নাম কেউ করেছে এর মধ্যে”?
“না, তোমার নাম কেউ করে নি – এখন পর্যন্ত। আমার ভয় করছে ওরা তোমাকে ধরে ফেলবে। ওরা পাড়ায় বাব্লু দাকে প্রচুর মারল। লাঠি দিয়ে। তারপর দুইজনকে নিয়ে গেল লকাপে। ওদের যদি টরচার করে তাহলে বাব্লুদার বৌ তোমার নাম বলে দেবে। আমার ভয় করছে”।
“ভয় পেতে নেই। আমাকে ওরা ধরতে পারবে না। আমি ট্রেনে চেপে বসেছি। গারি এই ছারল বলে।”
এতটুকু বলে ফোনটা নিভিয়ে পকেটে রেখে জানলার বাইরে তাকাল। গারডের কামরার সামনে একটা ভির জমে গেছে। কয়েকটা পুলিস গার্ডের সাথে কথা বলছে। দেখে মনে হয় লাল্বাজার। তাদের সাথে হাতে দরি বাধা অবস্থায় – বাব্লুর বৌ। ট্রেন সার্চ করতে এসেছে। ছোটকা একটু খন অন্যমানস্ক হয়ছিল। ট্রেনের দুই মাথায় আর মাজখানে পুলিসের লোক পাহারা দিচ্ছে। ছোটকা খেয়াল করে নি। পালানর রাস্তা বন্ধ। প্রতিটা unreserved কামরায়ে উঠে উঠে খানাতল্লাস হচ্ছে। একটা খাচার ইদুরের মত আটকা পরে গেছে। পুলিসের দল ওদের কাম্রার দিকে এগিয়ে এল। সামনের অফিসারটা জানলার ভেতর উকি মারতে মারতে। লোকটার মুখ যেন ইগলের মত নিষ্ঠুর। সাথে হাতে দরি বাধা অবস্থায় বাব্লুর বৌ। ওরা সামনের গেট দিয়ে কামরায় ঢুকল। পেছনের গেট দিয়ে দুটো পুলিস পথ রোধ করে দারিয়ে। একে একে সিট দেখতে দেখতে তারা এগিয়ে আসছে ছোটকার দিকে। মাঝে মাঝে সন্দেহ হলে সামনের ইগল্টা আইডি দেখতে চাইছে। ছোটকা চোখ বুজে ঘুমবার ভান করল। যদি পাশ কাটিয়ে চলে যায়।
একটা পাজরের কাছে খোঁচা খেয়ে তার চোখ খুলে গেল। সামনে ইগল। হাতে ছোট বাটন।
“আইডি বার করুন”।
ছোটকা পকেট হাত্রে মানিব্যাগ বার করে আধার কার্ড এগিয়ে দিল। তার চোখ ইগলের পিছনে দাঁড়ানো বউটার উপর। মেয়েটার চোখে কি দেখল ছোটকা – ভয়ের ছায়া নাকি একটা বিদ্রহের স্ফুলিঙ্গ। ইগল আধার কার্ড খুটিয়ে দেখছে।
“আপানার পারাতে থাকে – চেনেন নাকি”? মেয়েটাকে প্রশ্ন। মেয়েটা নির্বাক মাথা নারল – না সে ছোটকা কে চেনে না।
“ঠিক বলছেন তো – নিজের সোহাগ মেরে পরকে বাচাবেন না যেন”। ইগলে দাতচাপা হাসি একটা শিকারি পাখীর ডাকের মত। মেয়েটার চোখে যেন চিতার আগুন ঝলসে উঠে আবার নিভে গেল।
“বাব্লুর একটা পা আপনারা ভেঙ্গে দিয়েছেন। তাকে এখন সেলের রডের সাথে বেধে ঝুলিয়ে দিয়েছেন আপানারা। আপনারা সব কিছু করতে পারেন। আপনারা মালিক। আমি মিছে কথা কেন বলব। এই লোকটাকে আমি আগে কখনো দেখিনি।”
ইগল ছোটকার কার্ড ফিরিয়ে দিল। পুলিসের পল্টন ওদের কামরা ছেরে নেমে গেল। প্লাটফর্মের মাথা থেকে গার্ড সবুজ পতাকা নেরে গারি চালু করল। ঘটাং ঘটাং শব্দ তুলে লাল্গলা এক্সপ্রেস স্টেশন ছেরে বেরিয়ে গেল।
সমাপ্ত
Enjoyed a lot! Great story telling Gugul. Very graphic. Almost can visualize the situations. Shall wait for more.
LikeLike
Hi bhondul thanks for your super comment. Abar kono idea pele likhbo 4 sure. All my love and regards to your family.
LikeLike
Loved it Gugul da. Since the setting is so close to our heart each and every scene kept unfolding in front of me…. thanks for the experience…. Amazing story…. very real and touching
LikeLiked by 1 person
Thanks for your comments – its great u liked it so much 🙂
LikeLike
Great share. I am looking horror story like this. Keep sharing large number of story.
LikeLike
I like horror stories… By reading this i’am glad
LikeLike
Great Article About Ghost Story, Thank You Very Much For Writing Such A Nice Article. I read All Your Post.
LikeLiked by 1 person
Ki chomotkar pranjol shabolil lekhoni ! Aik kothai oshadhoron.
Trust me you were born to be a writer . Any future plan of compiling these short stories into a book ? Likhte thakoon .Shubho Kamona roylo.
A non Bengali,Bangla loving pathok .
LikeLike
Thank you dear anonymous reader. Apnar comment gives me great inspiration and encouragement.
LikeLike