নিমাই মাইতির মতিভ্রম

scary faceThe inside of a tea shanty. An old man is sitting dozing at a table. A kerosene lamp provides the only light. Outside it is dark and heavy rain can be heard falling on the tin roof. A man enters the shanty. He is wet, agitated and scared. He sits down next to the old man.

মাইতিঃ (হাপাতে হাপাতে) চা – এক কাপ চা হবে কি?

বুড়োঃ নিশ্চই হবে – ওরে কানাই – বাবুকে এক কাপ চা এনে দে। এত হাপাচ্ছেন কেন? কি হয়ছে?

মাইতিঃ কি বলব মশাই – প্রানে বেচেছি – ভগবানের দয়ায়।

বুড়োঃ তাঁর মানে?

মাইতিঃ তার মানে – আজ খুন হতে হতে বেচে গেছি।

বুড়োঃ খুন –  কে খুন করছিল আপনাকে?

মাইতিঃ জানি না – আগে কখনও দেখিনি – লোকটা আমাকে স্টেশন থেকে পিছু করেছিল।

বুড়োঃ চেনেন নাকি লোকটাকে?

মাইতিঃ চিনবো কি করে – আমি কি থাকি নাকি এই শহরে – আজ এই প্রথম আশা। ওঃ কি কুক্ষণেই যে এখানে এসেছিলাম।

বুড়োঃ তাই বলুন, আপনি এখানে নতুন এসেছেন। এবার বুঝেছি আপনাকে চিনতে পারছি না কেন? নিন চা খান – এখানে কনও বিপদ নেই।এটা আমারি দোকান, আমাকে এখানে সবাই বুড়ো জ্যাঠা বলেই চেনে। বলুন কি হয়ছে। এত রাতে অচেনা রাস্তায় আপনি কি করছিলেন?

মাইতিঃ (চা তে এক চুমুক দিয়ে) প্রান বাচালেন আপনি। আমার নাম নিমাই চরন মাইতি, দক্ষিণেশ্বরে বাড়ি। ৮:৩০ টার বনগাঁ লোকাল ধরেছিলাম শিয়ালদহ স্টেশন থেকে। ভেবেছিলাম ১০টার মধ্যে পউছে যাব। মাঝখানে লাইন রিপেয়ারের কাজ – ট্রেন লেট করে দিল। তাঁর উপর হঠাত করে ঝর বৃষ্টি। ট্রেন যখন পউছল তখন রাত ১১টা। স্টেশন একেবারে খাঁখাঁ করছে। একটা রিকশা, আউটও, কুলি কিসসু নেই।

বুড়োঃ তা কি করলেন?

মাইতিঃ কি আর করা। পথ ঘাট কিছুই জানা নেই। এদিকে স্টেশনে থাকবার কনও ব্যাবস্থা নেই। মহা সমস্যা। দেখি একটা লোক বসে আছে, বাতির তলায় বেঞ্চির উপর। সারা শরির মাথা পর্যন্ত শাল ঢাকা। শুধু তাঁর চোখ দুটো দেখা যাচ্ছে। তাকে জিগ্যাস করলাম – ভাই লছিম্পুরের রাজবারিটা কোন দিকে একটু বলে দিতে পারবে।

বুড়োঃ লছিম্পুরের রাজবারি ?

মাইতিঃ হ্যা – লোকটা বলল খুব পারব। স্টেশন থেকে বেরিয়ে সোজা বা দিকের রাস্তাটা নেবেন। ওটা দিয়ে ১০মিনিটের পথ গেলে একটা বটতলায় শিবমন্দির দেখবেন। রাস্তা ওখাণে দুই ভাগ। আপনি ডাণ দিকের রাস্তা নেবেন, ওই রাস্তা দিয়ে আর ২০ মিনিট হাটলেই আপনি রাজবারির ফটক দেখতে পাবেন। বিশাল রাজবারি, ভুল হবার নয়।

বুড়োঃ হু – তা বটে, তাঁর পর কি হল?

মাইতিঃ তা আমি ওই লকটার কথা মত বা দিকের রাস্তা দিয়ে হাটতে শুরু করলাম। এদিকে বৃষ্টি পরছে ক্রমাগত। জেচে জেতে মনে হতে লাগল আমার পেছনে কেউ আসছে। পিঠের চুল খারা হয় উঠল। পিছনে তাকিয়ে দেখি অন্ধকারে একটা ছায়া মূর্তি ৫০ গজ দূরে আমার পেছন পেছন আসছে। আমি ভয় পেলাম। নিরঘাত ওই স্টেশনের লোকটা – আমাকে একা পেয়ে…

বুড়োঃ আপনি ত খুব ভয় পেয়ে গেছেন দেখছি। তা ভয় পাবারি কথা। আজকাল রাস্তাঘাট জা হয়ছে। গুন্ডা বদ্মাইশে দেশটা একেবারে ছেয়ে গেছে। জাক আপনার কনও ক্ষতি হয় নি এই রক্ষা। আপনি এখন নিশ্চিন্ত হতে পারেন কনও খুনে গুন্ডা দোকানে ঢোকার সাহস পাবে না। তা আপনি বছিলেন রাজবারি এসেছিলেন – কি কারনে এসেছিলেন – দেখবার জন্য?

মাইতিঃ মাথা খারাপ – এই ঝর জল ঠেলে এত রাতে রাজবারি দেখতে আসব? না মশাই আমি এসেছি পেটের দায় – চাকরি করতে।

বুড়োঃ কিরকম চাকরি?

মাইতিঃ মাস্টারের চাকরি – বারির ছেলে মেয়েদের পরাব – খবরের কাগজে বিগ্যাপন দিয়েছিল – থাকা খায়য়া সবি দেবে, তাঁর উপর মাসিক বেতনটাও নেহাত তুচ্ছ নয়।  তাই যখন আমার দরখাস্ত চিঠি মারফত মঞ্জুর হল – তখন আর দিধা করলাম না, বউ বাচ্চা দক্ষিণেশ্বরে রেখে চলে এলাম চাকরি শুরু করতে। আশা ছিল একটু গুছিয়ে নিয়ে অদের এখানে আনবো। তখন কি আর জানতাম এমন বিপদে পরতে হব।

বুড়োঃ আশ্চর্য – লছিম্পুরের রাজবারিতে চাকরি করতে এসেছেন……

মাইতিঃ আশ্চর্য কেন?

বুড়োঃ এই রাজবারির ইতিহাস আপনি জানেন?

মাইতিঃ কি ইতিহাস।

বুড়োঃ আপনি জানতে চান – তা বলি শুনুন। আজ থেকে ৫০ বছর আগে এখানকার রাজা চন্দ্রবরমন চৌধুরী মারা যান। তাঁর গদিতে বসেন তাঁর বড় ছেলে শ্রী সূর্য শেখর চৌধুরী। অনেক গুন ছিল রাজা সূর্য শেখরের – এলাকায় উন্নয়নের জন্য অনেক কিছু করেছিলেন। পারায় পারায় টুবেওেল্ল খোরা, বিনা মুল্যে জনগনের জন্য চিকিৎসাকেন্দ্র, ছেলে মেয়েদের পারাশুনার পাঠশালা এই এলাকার প্রচুর ভাল কাজ তিনি করেছিলেন। এ ছাড়া গান বাজনা, ছবি আকা এই সকল কলার খাটি প্রেমিক ছিলেন তিনি। তাঁর স্ত্রি নয়নতারা ছিলেন তাঁর সকল শুভ কারজের প্রেরনা। তাঁর মত বিদুষী রূপবতী সারা বাংলাদেশ খুজলেও আপনি পেতেন না। সব কিছুই পেয়েছিল সূর্য শেখর – কিন্তু না – সব পেয়েও হারতে হল তাকে।

মাইতিঃ হারতে হল – কার কাছে?

বুড়োঃ নিয়তির কাছে। এটা জানবেন বিধাতা সব কিছু দিলেও, কথাও একটা ফাক রেখে দেন – বিধাতার খেলা। সূর্য শেখরের বেলাতেও এইরকমই হয়ছিল। মানুষের হাজার গুন থাকলেও একটা দোষের জন্য সব নষ্ট হয় যায়। সূর্য শেখরের ছিল এক মারাত্মক চরিত্র দোষ। আগেই  বলেছি তাঁর ছিল গান বাজনার নেশা – এর সাথে ছিল সুরা পানের অভ্যাস। আমার আপনার মত মত নেশা নয় – রোজ রাতে বেহুশ হওয়া পর্যন্ত মদ খেতেন তিনি। দামি বিলিতি মদ ছাড়া খেতেন না – বলতেন নেশা না করে তিনি ঘুমতে পারতেন না। সন্ধ্যার জলসা ক্রমেই বারতে লাগল। কলকাতা থেকে  আসত তার বন্ধুরা তার সঙ্গে ফুরতি করতে। রোজ রাতে শারাবের ফয়ারা ছুটত লছিম্পুরের রাজবারিতে।

মাইতিঃ তাঁর স্ত্রি এসব মেনে নিলেন?

বুড়োঃ কি করে মানবে – কনও স্ত্রি স্বামীর এরকম সর্বনাশ কখনও মানতে পারে। অনেক ভাবে তিনি সূর্য শেখরকে মানাবার চেশটা করলেন। কিন্ত সূর্য শেখর তাঁর কথা শুনলেন না। পাতানো বন্দুরাই তাঁর কাছে বড় হয় গেল। এটাও হয়ত নয়নতারা মেনে নিতেন যদি না সূর্য শেখর জলসাতে বাইজি আনতেন।

মাইতিঃ নিজের বারিতে বাইজি আনলেন?

বুড়োঃ হ্যা তাই আনলেন – কলকাতা থেকে রোশনি বাই।

মাইতিঃ নয়নতারা কি করলেন?

বুড়োঃ গলায় দরি দিলেন। সেদিন রাতে জলসার শেসে যখন সূর্য শেখর শোবার ঘরের দরজা খুলে প্রবেশ করলেন, তাঁর মাথায় কিছু ঠেকল। নয়ন্তারার আলতা মাখানো পা – তাঁর ম্রিত দেহ করিকাট থেকে ঝুলছে।

মাইতিঃ কি সাংঘাতিক। তারপর…

বুড়োঃ তারপর …… তারপর সব শেষ। সূর্য শেখর পাগল হয় গেলেন – রাতা রাতি তাঁর চুল পেকে গেল। রাজবারিও বেশি দিন টিকলোনা। এই ঘটনার ঠিক দিন গুনে এক বছর পর – রাত্তির বেলায় চৌধুরী রাজবারিতে আগুন লাগল। বারির চাকর বাকর বেচে পালাল বটে কিন্তু সূর্য শেখর বাচল না। হয়ত মদের ঘরে ছিল, হয়ত পালাতে চায় নি, হয়ত আত্ম হত্যা, হয়ত খুন – অনেকে অনেক কিছু রটায়।

মাইতিঃ রাজবারি পুরে গেল, তাহলে এখন সেটা ……

বুড়োঃ পোরো বাড়ি – অখানে এখন কেউ থাকে না।

মাইতিঃ তাহলে আমার চাকরি?

বুড়োঃ আমিও ত সেই কথাই ভাবছি – ওই পোড়ো বারিতে গিয়ে আপনি কাদের পরাবেন? আপনি কি ভুতেদের উপর মাস্টারি করবেন নাকি।

মাইতিঃ ভুত! ওই বারিতে ভুত আছে নাকি?

বুড়োঃ জানি না – তবে ওদিকটা রাতের বেলা কেউ জায়ে না, আপনি এখানে নুতন তাই………

মাইতিঃ তাহলে কি স্টেশনের ওই লোকটা – সেও কি মানে……

বুড়োঃ কেন তাকে কি আপনার ভুত মনে হয়ছিল?

মাইতিঃ হ্যা – না মানে আমার সব কিরকম গুলিয়ে যাচ্ছে।

বুড়োঃ আশ্চর্য নয় – গুলতেই পারে, তা লোকটা আপনাকে পিছু করেছিল – কতদুর পর্যন্ত? দকান পর্যন্ত পিছু করেছিল?

মাইতিঃ না – বট গাছের কাছে পউছেছি, যেখানে শিবমন্দিরের পাশ থেকে রাস্তা দুই ভাগ হয় গেছে। সেখানে আমি দারিয়ে পরলাম। লোকটা কাছে আস্তে তাকে জিগ্যাসা করলাম – কি চাও তুমি – আমার কাছে পয়সা নেই – আমার পিছু করছ কেন? সে বলল ভয় নেই আমি আপনাকে রাস্তা দেখিয়ে দিতে এলাম। আসুন আমার সাথে বলে আমার হাথ সে ধরল। ওঃ সে কি ভয়ঙ্কর – আমি কনদিন ভুলতে পারব না।

বুড়োঃ আরে মশাই – আপনি একটু বেশি নাটকিয় করে বলছেন ব্যাপারটা। আপনার হাতটাই ত ধরেছিল – গলা ত চেপে ধরেনি।

মাইতিঃ আপনি বুঝতে পারছেন না – সেই হাত…সেই হাত সে কি বীভৎস।

বুড়োঃ কেন তার হাত বীভৎস কেন?

মাইতিঃ সেই হাত মানুষের হাত নয়।

বুড়োঃ মানুষের নয়? তবে কেমন হাত?

মাইতিঃ আমি আর ভাবতে পারছি না।

বুড়োঃ একটু মনে করবার চেশটা করুন্‌ ……… হাতটা কি এইরকম হাত ছিল?

The old man exposes his hands which were till now concealed under his shawl. He may hold them up to the audience or catch Maity by the throat, The hands are not human (use some horror/Halloween prop gloves)

Note to director: This play is written to be performed at close quarters with the audience.

 

সমাপ্ত।

5421619995_92fb053bf5_z

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

5 comments

Leave a comment